শিশুকে মাতৃ স্তন্যপান করানো বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এবং তার উত্তর (Breast-feeding related some important Questions and Answers)


বুকের দুধ খাওয়ানোর গুরুত্ব কি?

  • মায়ের দুধ শিশুকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। 
  • মায়ের দুধ শিশুদের সর্বাধিক ও সম্পূর্ণ পুষ্টি প্রদান করে। বুকের দুধে ঠিক পরিমান মতো ফ্যাট, চিনি, জল এবং প্রোটিন থাকে যা শিশুর বৃদ্ধি এবং বিকাষের জন্য প্রয়োজন।
    শিশুদের ক্ষেত্রে, যে কোন ফর্মুলা দুধের চেয়ে বুকের দুধ হজম করা অনেক সহজ। যে শিশুদের বুকের দুধ খায়ানো হয় না তাদের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি থাকে।
    মায়ের দুধে এন্টিবডি রয়েছে যা শিশুদের ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস থেকে রক্ষা করতে পারে। বুকের দুধ কানের সংক্রমনের হাত থেকে রক্ষা করে। শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়ারিয়া বা পেট খারাপ হয় না। 
  • বুকের দুধ খায়ানো - শিশুর সাথে মায়ের বন্ধনে সহায়তা করতে পারে। শারীরিক যোগাযোগ নৱজাতকের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ এবং তাদের আরও সুরক্ষিত, উষ্ণ এবং সাচ্ছন্দ্য বোধ করতে সহায়তা করতে পারে। 
  • বুকের দুধ খাওয়ানো, মায়েদের অ্যালার্জি, অসুস্থতা, স্থূলত্ব, ডায়াবেটিস এবং ক্যানসারের মতো রোগ থেকে রক্ষা করে।

প্রথম ৬ মাস শিশুকে শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানো গুরুত্বপূর্ণ কেন?

  • মায়ের দুধ শিশুকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। 
  • বুকের দুধে শিশুর ৬ মাস বয়স অবধি তার বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত প্রয়োজনীয় পুষ্টি থাকে। স্তন্যপান শিশুর বৃদ্ধি এবং মস্তিষ্কের বিকাশকে ত্বরান্বিত করতে পারে, সংক্রামণের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয় এবং টাইপ-১ ডায়াবেটিস এবং স্থূলত্বের বিরুদ্ধে শিশুকে আজীবন সুরক্ষিত রাখে। 
  • বুকের দুধে পর্যাপ্ত পরিমানে জল থাকে। বুকের দুধে ১০ ভাগের মধ্যে ৯ ভাগই জল। বুকের দুধ বাড়ির জলের থেকেও স্বাস্থকর ও নিরাপদ। 
    অতএব যখনই মা অনুভব করবেন যে তার সন্তানের পিপাসা পেয়েছে, তিনি তার সন্তানকে, তার দুধ পান করিয়ে দিতে পারেন। এটি শিশুর তৃষ্ণা মেটাবে এবং শিশুকে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করবে এবং বেড়ে উঠতে সহায়তা করবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (World Health Organization) এই বিষয়ে পরামর্শ কি?

  • জন্মের এক ঘন্টার মধ্যে শিশুকে দুধ খাওয়ানো শুরু করুন। 
  • শিশুকে প্রথম ছয় মাসের জন্য শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়ান। 
  • ছয় মাস পরে পুষ্টিযুক্ত এবং নিরাপদ পরিপূরক খাবার খাওয়ানো শুরু করার সাথে সাথে দু বছর বয়স পর্যন্ত স্তন্যপান করিয়ে যান। 
    • মায়ের দুধ নবজাতক ও শিশুদের সম্পূর্ণ শৈশবকাল জুড়ে, তাদের অসুস্থতা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। 
    • গুঁড়ো দুধে সংক্রমণ এবং রোগ ছাড়াতে পারে, সুতরাং এটি কখনোই দেওয়া উচিত নয়। 
    • স্তন্যপান সংক্রামক রোগগুলির বিরুদ্ধে বিশেষভাবে কার্যকর, কারণ এটি শিশুকে সরাসরি রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা প্রদান করে।

স্তন্যপান করানো মায়েদের কি খাওয়ার খাওয়া উচিত?

ভাত বা রুটির সাথে বিভিন্ন ধরণের খাবার যেমন সবুজ, হলুদ, কমলা, লাল রঙের ফল এবং শাকসবজি, মাছ, ডিম, বিভিন্ন ধরণের ডাল, দুধ, ঘি, পনির, দই ইত্যাদি।

আপনি কি জানেন?

  • শিশুর প্রথম ৬ মাস, তাকে বুকের দুধ ছাড়া আনা কিছু খাওয়ালে, শিশুর ডায়রিয়া বা অন্যান্য অসুস্থতা হতে পারে।
  • বোতলে দুধ খোয়ালে শিশুর অসুস্থ হওয়ার সম্ভবনা থাকে। 
  • শিশুকে স্তন্যপান না করলে, শিশু অপুষ্টিতে ভুগতে পারে, যার করণে শিশুর ওজন এবং উচ্চতা বয়স অনুযায়ী বাড়ে না। বার বার ডায়রিয়ার মতো সংক্রমণের কারণে শিশুর মৃত্যুও হতে পারে। শিশুকে ঠিকভাবে বুকের দুধ খাওয়ালে, এই ধরণের মৃত্যু কমতে পারে। 
  • প্রথম ৬ মাস পর্যন্ত শিশুকে শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত। যদি শিশুকে বুকের দুধ ছাড়া অনন্যা কিছু খাওয়ানো হয়, তবে তার মায়ের বুকের দুধের পরিমান কমে যায়।

First six month of baby should only be fed by his or her mothers breast milk

প্রথম কয়েক সপ্তাহ কত বার করে স্তন্যপান করানো উচিত?

ঘন ঘন খাওয়ানো প্রথম কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মায়ের দুধের উৎপাদনকে উদ্দীপিত করতে সহায়তা করে। আপনার শিশুর ১-২ মাস বয়স হওয়ার পরে, সে সম্ভবত দিনে ৭-৯ বার দুধ খেতে চাইবে। জীবনের প্রথম কয়েক সপ্তাহে, বুকের দুধ খাওয়ানো "চাহিদা অনুযায়ী" হওয়া উচিত (যখন শিশু ক্ষুদার্ত হয়), যা প্রায় ১ / থেকে ৩ ঘন্টা অন্তর হয়।

শিশুকে বোতলে (পাউডার) দুধ খাওয়ানো ক্ষয়ক্ষতি

  • বোতল ও বোতলের মুখটি সঠিকভাবে পরিস্কার করা কঠিন এবং দুধের বিন্দু বোতলের এমন কিছু জায়গায় থেকে যায়, যা পরিষ্কার করা কঠিন। সুতরাং রোগজীবাণু সহজেই বোতল থেকে শিশুর পেটে যেতে পারে। 
  • ফলস্বরুপ শিশুটির ডায়রিয়া এবং জ্বরের মতো ভয়ঙ্কর রোগ হতে পারে। 
  • এরকম অসুস্থতার কারণে শিশুর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।

স্তন্যদানকারী মায়েরা কি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নিতে পারেন?

হ্যাঁ, নিতে পারবেন।
সারা দেশের শিশু বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে স্তন্যদানকারী মায়েদের ভ্যাকসিন দেয়ার ফলে বুকের দুধের মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে এন্টিবডি সরবরাহের সহায়তা হতে পারে। এটি শিশুদের ভাইরাস এর  বিরুদ্ধে আপেক্ষিক প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরী করতে আরও সহায়তা করবে। ভ্যাকসিন স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য একেবারেই নিরাপদ। কোনো ভয়ের কারণ নেই। ভ্যাকসিন দেওয়ার আগে বা পরে স্তন্যপান করানো একেবারেই নিরাপদ। স্তন্যদানকারী মায়েদের ভ্যাকসিন দেওয়ার ফলে ও তার সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানোর  কারণে দুজনেই ভাইরাস এর বিরুদ্ধে সুরক্ষিত থাকবে।

একজন কোভিড সংক্রামিত মা কি তার শিশু কে স্তন্যপান ও অন্যান্য পরিচর্যা করতে পারবেন?

মায়ের স্তন্যদুগ্ধের গুনাগুনের কথা মাথায় রেখে আক্রান্ত মা অবশ্যই তার সন্তানকে স্তন্যপান করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে মাকে সঠিকভাবে নিজের নাক ও মুখ সার্জিকাল মাস্ক এর সাহায্যে ঢাকতে হবে এবং সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে তবেই শিশুকে নিজের কাছে নিতে পারবেন।
মা যদি এতটাই দুর্বল থাকেন যে তিনি তার শিশুকে স্তনে রাখতে পারছেন না, সে ক্ষেত্রে তার স্তন থেকে দুগ্ধ নিষ্কাশন করে (Expressed Breast Milk) সেই দুধও শিশুকে খাওয়ানো সম্ভব। সে ক্ষেত্রে পরিচর্যা প্রদানকারীকে কোভিড সুরক্ষা বিধি মেনে চলতে হবে।
মা ও শিশুকে একই ঘরে রাখলে শিশুটির খাটটি মায়ের খাট থেকে অন্তত ৬ ফুট দূরে রাখতে হবে।

কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন গর্ভবস্থার জন্য নিরাপদ?

প্রাপ্ত কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনগুলি নিরাপদ এবং এই ভ্যাকসিন গর্ভবতী মহিলাদের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত অসুস্থতা / রোগ থেকে রক্ষা করে। যে কোনো ওষুধের মতোই, এই ভ্যাকসিনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে যা সাধারণত হালকা। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে গর্ভবস্থায় কোভিড রোগ হলে গর্ভকালীন বিভিন্ন জটিলতার হার ভরে যায়, রোগ ও গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে তাই গর্ভবতী মাকে এই ভ্যাকসিন দেওয়া প্রয়োজন।

কোভিড-১৯ অতিমারীর সময় কি বুকের দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে?

মায়ের বুকের দুধ সংক্রামক রোগগুলির বিরুদ্ধে বিশেষভাবে কার্যকর কারণ এটি মায়ের কাছ থেকে শিশুর দেহে সরাসরি এন্টিবডি স্থানান্তর করে শিশুর প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করে।

 

 

উপরিউক্ত তথ্য গুলি "নারী ও শিশু বিকাশ ও সমাজ কল্যাণ দপ্তর, পশ্চিমবঙ্গ সরকার " এর একটি প্রচার মূলক পুস্তিকা থেকে সংগ্রহীত।

Comments

Popular posts from this blog

KNOW ABOUT BASIC ELECTRICAL AND ELECTRONIC DEVICES

FUNCTION OF BASS, TREBLE, VOLUME OPTION IN AN AMPLIFIER