চিকিৎসা পদ্ধতি, বিজ্ঞান ও কিছু জিজ্ঞাসা (Medical systems, Science and some Questions)
এই পোস্টটিতে আমরা চিকিৎসা পদ্ধতি, বিজ্ঞান, তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক এবং তার বিপণন বিষয়ক কিছু প্রাথমিক এবং অতি জরুরি কিছু বিষয়ে আলোকপাত করব। পাঠকগণ, এই পোস্টটিতে আমরা কোনো conclusion এ পৌঁছবো না বরং চিন্তার খোরাক জোগানোর জন্য কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হব। বিচার বিশ্লেষণ আপনাদের উপরেই থাকলো। নিচের comment section এও আপনারা আপনাদের মন্তব্য জানাতে পারেন। আমি যখন এই পোস্টটি লিখছি তখন গোটা পৃথিবী COVID-19 প্রবল হানায় বিধস্ত। পর্বে পর্বে (প্রথম, দিত্বিয় ..) তার ঢেউ আছড়ে পড়ছে মানুষ্য জাতির উপর। ঠিক সেই সময় উপমহাদেশের এক প্রান্তে "আয়ুর্বেদ বনাম এলোপ্যাথি" বিতর্কের পালে হওয়া লাগিয়েছেন কিছু অতিপরিচিত ব্যাক্তিত্ব। এই পটভূমিতে দাঁড়িয়ে আমার মনে উদয় হয়েছে কিছু প্রশ্নের যা আজ এই পোস্টির মাধ্যমে তুলে ধরব। এই পোস্ট টি কোনো রাজনৈতিক, ব্যাবসায়িক বা কোনো লুকোনো উদ্দেশ্যপ্রনোদিত নয়। এই পোস্টটি সমাজের চিন্তাশীল,বিজ্ঞানমনষ্ক, উদার মনের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য।
এখন প্রাথমিক একটি প্রশ্ন হলো আমরা বর্তমান যুগে বিজ্ঞানকে আঁকড়ে ধরেছি কেন?
কারণ আমরা পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে সত্যে পৌঁছতে চাই, বিশ্বাসের বা কোনো influential person এর কথার উপর ভিত্তি করে নয়। আশা করি আপনারা সবাই একমত হবেন।
পৃথিবীতে সময়ের সাথে সাথে বহুরকম চিকিৎসা বিদ্যার উদ্ভাবন এবং বিকাশ হয়েছে।কিন্তু একটু ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে তাদের বিস্তার পৃথিবীতে সমান ভাবে হয়নি। এখন যে প্রশ্নটি স্বভাবতই উঠে আসে সেটি হল, কেন সব চিকিৎসা বিদ্যার বিস্তার গোটা পৃথিবীতে সমান ভাবে হয়নি।
এই প্রশ্নের উত্তর এক বা একাধিক হতেপারে, সম্ভ্যাব্য কিছু উত্তর নিম্নলিখিত :
- কম বিস্তার যে চিকিৎসা বিদ্যার হয়েছে সেগুলি অবৈজ্ঞানিক, বুনিয়াদি ভাবে ভিত্তিহীন বা বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে তৈরী।
- হয়তো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি রয়েছে কিন্তু মানুষের কাছে সেই তথ্য ঠিক ভাবে পৌঁছায়নি (কেন পৌঁছায়নি তার এক বা একাধিক কারণ হতে পারে )।
- চিকিৎসা বিদ্যাটিকে সঠিক ভাবে বাণিজ্যকরণ (commercialize) করা হয়নি।
- চিকিৎসা বিদ্যাটি আগামী প্রজন্মের কাছে কিভাবে পৌঁছবে তার পোক্ত পরিকাঠামো তৈরী করা হয়নি।
- সার্বভৌম সরকারের (Sovereign Government) স্বীকৃতি দেওয়াতে অনিচ্ছা, অনীহা, দ্বিধাবোধ ইত্যাদি।
- সদাপরিবর্তনশীল সমাজ, প্রকৃতির সঙ্গে তালমিলিয়ে চিকিৎসা শাস্ত্রটিকে updated রাখার মত গবেষণা হয়নি (কোনো হয়নি তার অনেক কারণ হতে পারে, থাকে মধ্যে একটি money flow হতে পারে)।
বর্তমান দিনে হাতে গোনা কয়েকটি চিকিৎসা বিদ্যা আজ অতি জনপ্রিয়তা পেয়েছে, বলা ভালো পৃথিবীর প্রায় কোনে কোনে পৌঁছে গেছে। কিন্তু সেই কয়েকটির মধ্যে কে সবচেয়ে ভালো তা নিয়ে মতভেদ, মান অভিমান ইত্যাদি মাঝে মাঝেই প্রকট হয়ে ওঠে। একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে যে এই জনপ্রিয় চিকিৎসা ব্যবস্থা বা বাবস্থাগুলির যতই বিস্তার ঘটেছে, পাল্লা দিয়ে বিলুপ্ত হচ্ছে গতানুগতিক চিকিৎসা সংক্রান্ত সংস্কার (Home remedy)।
এখন প্রশ্ন হলো এই যে, চিকিৎসা সংক্রান্ত traditional পদ্ধতিগুলি বিলুপ্ত হচ্ছে এর পেছনে সত্যিকারের কারণ কি ?
এর এক বা একাধিক সম্ভাব্য কারণ হতে পারে যার মধ্যে আমার মনে হাওয়া কয়েকটি নতিবদ্ধ করলাম।
- সব traditional পদ্ধতি, home remedy হারিয়ে যাচ্ছে না, যেগুলি অবৈজ্ঞানিক,বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে তৈরী তা লোকে মানছে না তাই হারিয়ে যাচ্ছে। যেগুলি সত্যিই বৈজ্ঞানিক, সেগুলি মানুষ মানছে, ব্যবহার করছে এবং টিকেও থাকবে।
- এই পদ্ধতি গুলির সম্বন্ধে সঠিক ধারণা বা সম্যক ধারণা খুব বেশি জনের নেই তাই এগুলি ব্যবহার করে অনেক সময় কুফল, অঘটন ঘটে, তাই হারিয়ে যাচ্ছে।
- ঠিক ঠাক করে বৈজ্ঞানিক ভাবে গবেষণা করে দেখা হয়নি কোনটি ঠিক আর কোনটি ভুল বা ক্ষতিকারক, সেই জন্য সমাজের সব স্তরের মানুষের মান্যতা পায়নি।
- এগুলি জনপ্রিয় চিকিৎসা ব্যাবস্থার ছত্রছায়ায় চলতে থাকা ব্যাবসার পথে একটি ছোট্ট অন্তরায়।
- বর্তমানের চটজলদি এবং প্রোডাক্টের প্রাচুর্যতায় পূর্ণ সমাজ ব্যবস্থা এবং অর্থনীতিতে, চাইলেই হাতের কাছে সবকিছু পাওয়া যাচ্ছে । তাই কষ্ট করে traditional উপায়ে রোগ নির্মূলের প্রতি একটি অনিচ্ছা তৈরী হচ্ছে।
বিজ্ঞান, আমরা জানি সত্যের খোঁজে ব্রতী কিন্তু বাস্তব যদি দেখি তাহলে আমরা বুঝতে পারব সত্যকে খোঁজার জন্য গবেষণার প্রয়োজন আর তার জন্য চাই অর্থ।
এখন প্রশ্ন হলো বিজ্ঞান চর্চার জন্য এই অর্থ আসছে কোথা থেকে এবং সেই অর্থের সত্য খোঁজা বাদে তার আর কি কোন উদ্দেশ্য আছে?
এই প্রশ্নের বহুমুখী এবং একাধিক উত্তর হতে পারে। তাদের মধ্যে আমার মনে হওয়া কিছু সম্ভাব্য উত্তর লিখলাম।
প্রথমে অর্থ আসছে কোথা থেকে:
- বিভিন্ন সার্বভৌম্যা সরকার তাদের দেশে বিজ্ঞান চর্চার জন্য রাজস্ব বায় করে।
- বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণার কাজে অর্থ বায় করে।
- অনেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উপর পণ্য তৈরী করা কোম্পানি গবেষণার কাজে অর্থ বায় করে।
- বড় বড় গবেষণাগার গুলি গবেষণার জন্য অর্থ বায় করে।
অর্থ বিনিয়োগের উদ্দেশ্য:
- অর্থ বিনিয়োগের সমাজে, দেশে, পৃথিবীতে যাতে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ ঘটে।
- জীবন যাত্রার মানোন্নয়ন ঘটানো।
- রাজনৈতিক শ্রেষ্ঠতা প্রতিষ্ঠার আকাঙ্খা।
- বিশুদ্ধ ব্যাবসায়িক উদ্দেশ্য।
- বিশুদ্ধ বৈজ্ঞানিক খোঁজের আকাঙ্খা।
বর্তমান দিনে চিকিৎসা ব্যবস্থা গুলি ক্রমশ ব্যায়বহুল এবং অতি যন্ত্র নির্ভর হয়ে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে কয়েকটি ব্যবস্থা সমাজের আর্থিক ভাবে মধ্যম এবং নিম্ন বর্গের মানুষের চোখে আকাশ ছোঁয়ার মত। এ নিয়ে বিতর্ক হতে পারে ব্যবস্থাগুলি কেন এত ব্যায়বহুল। এই প্রসঙ্গে মনে পড়লো বহু প্রচলিত একটি প্রবাদ "Prevention is better than cure." (প্রতিরোধ আরোগ্যের চেয়ে ভালো)। আশাকরি এই প্রবাদটির স্বগে একমত হবেন।
এখন প্রশ্ন হলো আমরা রোগ প্রতিরোধ করার ভাবনাটা কি ক্রমশ ভুলে যাচ্ছি?
এই ব্যাপারটি আমাদের সবার একটু গভীর ভাবে ভাবতে হবে। যদি দৈনন্দিন জীবন যাত্রার মধ্যে একটু পরিবর্তন এনে রোগের হাত থেকে বাঁচা যায় তবে সেটা ভালো নয় কি?
পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্যা ধন্যবাদ
Comments
Post a Comment